প র্য বে ক্ষ ণ

জামায়াতের বৈঠক বয়কট, অতঃপর...

আহমেদ জামাল | অনুসন্ধান
জুন ২১, ২০২৫
জামায়াতের বৈঠক বয়কট, অতঃপর...

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক পরবর্তী যৌথ বিবৃতি নিয়ে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ন্ন হয় জামায়াত। যার ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ায় গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট করে দলটি। তবে প্রধান উপদেষ্টার টেলিফোনে দ্বিতীয় দিনেই মান ভাঙে তাদের। যথারীতি বৈঠকে যোগ দিয়েছে দলটি। 
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার অংশ হিসেবে ওইদিন রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বৈঠকে অংশ নিলেও অনুপস্থিত থাকে জামায়াতে ইসলামী। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, লন্ডনে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূভাবে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের  যৌথ বিবৃতি এবং ব্রিফিংয়ের প্রতিবাদ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম দিনের সংলাপ বয়কট করেছে জামায়াত। তিনি বলেন, লন্ডনের বৈঠকের বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই। তবে দেশের জাতীয় রাজনীতির যে কালচার তার ব্যত্যয় ঘটেছে বৈঠক পরবর্তী যৌথ বিবৃতিতে, আমাদের আপত্তিটা সেখানেই। কারণ কোনো দু’টি দেশ অথবা সরকার প্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরই যৌথ বিবৃতি হতে পারে। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা কিংবা মতবিনিময়ের পর যৌথ বিবৃতি হতে পারে না। এতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে বলে মনে করে জামায়াত। 


এ কারণে লন্ডন বৈঠকের পরদিন ১৪ই জুন নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ওইদিনের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে ওইদিনই গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, লন্ডন বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে সরকার এবং বিএনপিকে সমশক্তি বোঝানো হয়েছে। অথচ জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। জামায়াতের মতে, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আলোচনার পর ঢাকায় সর্বদলীয় বৈঠক করে রমজানের আগে ভোটের ঘোষণা দিলে সব দল এবং সরকারের জন্য ভালো হতো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার ‘নিরপেক্ষ থাকবেন বলে আশ্বস্ত করায়’ বুধবারের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ সময় তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন এখন ইফ, যদিতে আছে, কিন্তুতে যাবে কিনা আল্লাহ্‌ই জানে। বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের তৃতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতিতে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।


মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী  অংশ নেননি। পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বৈঠকটি বয়কট করেছে। গত ৩রা জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয় তা ‘যথাযথ’ হয়নি বলে মনে করছে জামায়াত। এর প্রতিবাদে জামায়াত কমিশনের বৈঠক বয়কট করেছে বলে দলটির তরফে জানানো হয়। এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং আপত্তি জানিয়ে একটা বিবৃতি আমরা দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছেন, অ্যাওয়ার্ড আনার জন্য, টাকা ফেরত আনার জন্য এবং ওনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের বৃহত্তর দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে একটা বৈঠক হয়। এটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারেও তেমন কোনো আপত্তি আমাদের নেই। কারণ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার প্রস্তাব আমরা করেছি। সুতরাং ডিসেম্বরে করা হলেও আমাদের দাবির মধ্যে পড়ে, এখন যে ফেব্রুয়ারির কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যেই। এখানেও কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হলো, তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে  যে কথা বলেছিলেন, সেটাকে রিভাইস করতে পারতেন। কিন্তু সেটা উনি করেন নাই। জামায়েতের নায়েবে আমীর বলেন, আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, তিনি একটি দলের সাথে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন দেশে সরকার প্রধানের সাথে সংসদের প্রধান বিরোধী দল বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সাথে বৈঠক হয়। তখন তাদের একটা স্ট্যাটাস থাকে। এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ১০০ এর বেশি দল আছে। তাহলে তো এমন এক কালচার তৈরি হবে উনি যার সাথে কথা বলবেন, একটা যৌথ বিবৃতি দিতে হবে। “আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীন ছিল, শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, সকল দলই বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে আমাদের আপত্তি, বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। প্রধান উপদেষ্টা ফোন করার কারণে জামায়াত সংলাপে এসেছে জানিয়ে তাহের বলেন, এর মধ্যে আমাদের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকের কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমীরের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সরকার যদি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সঠিক করার জন্য কঠোর না হয়, তাহলে আরেকটা স্বৈরাচারী নির্বাচন এই দেশকে রক্ষা করতে পারবে না। 

অনুসন্ধান'র অন্যান্য খবর