অ নু স ন্ধা ন

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

আহমেদ জামাল | অনুসন্ধান
মে ১০, ২০২৫
আওয়ামী লীগের  ভবিষ্যৎ কোন পথে?

ক্ষমতা হারানোর পর এবার দলের নেতৃত্ব হারানোর শঙ্কাও ভর করেছে শেখ হাসিনার ওপর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়ার নয় মাস অতিবাহিত হলেও দেশে দলীয় রাজনীতির হাল ধরার জন্য কাউকে দায়িত্ব দিচ্ছেন না তিনি। ফলে অগোছালো ছন্নছাড়া অবস্থায় প্রায় ১৬ বছর দৌর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু’-একজন নেতা কিছু কথা বললেও দলের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কথা বলছেন না কেউ। এ নিয়ে নানা আলোচনা- সমালোচনা থাকলেও এখন পর্যন্ত মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না কোনো নেতা। দলের প্রথম সারির  একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। তবে কি সত্যিই শেখ হাসিনা নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে আছেন, কারও ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না তিনি- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ প্রসঙ্গে দলীয় নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমি দলের মুখপাত্র নই। তাই সংবাদমাধ্যমে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারি না, দেবোও না। প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন এ দলের আরেক নেতা আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার এখনো সময় আসেনি। সময় যখন আসবে দেশের আঠারো কোটি মানুষ তার উত্তর দেবে। উপরন্তু এ ধরনের প্রশ্ন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও উল্লেখ করেন বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ওখানে থেকেই তো যেভাবে পারছেন নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের তো নেতা একটাই। আর কে কোথায় কীভাবে আছে বা নেই তা নিয়ে হয়তো তারা সেভাবে ভাবছে না। আপাতত হয়তোবা তারা এভাবেই চালাবে। এদিকে ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ৭৫ বছরের পুরনো দলটির রাজনৈতিক কাঠামো। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এ দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। তবু নানা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে পদ-পদবি নেই এমন সাধারণ কিছু কর্মী। কিন্তু এতে অনেক ক্ষেত্রেই হিতে বিপরীত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী অঞ্চলের একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক (যিনি ৫ই আগস্টের পর পদত্যাগ করেছেন) সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন ঝটিকা মিছিল বা কর্মসূচি দিয়ে দলকে সক্রিয় করা যাবে না। কারণ এখন সবাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত। এ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে আগে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। আওয়ামী লীগের লোকেরা ভুল করেছে এজন্য ক্ষমা চাইবে। এতে দোষের কিছু দেখছি না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমা চেয়েই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। এখনো জনগণের কাছে যেতে হলে এর বিকল্প নেই। তবে অন্যায় অপরাধ যারা করেছে তাদের বিচার চান তৃণমূলের এই আওয়ামী লীগ নেতা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তানের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে ভূরুঙ্গামারী পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি এখন বিরান পড়ে আছে। অকস্মাৎ ক্ষমতার পরিবর্তনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলে। এদের বেশির ভাগে এখন ‘চাচা আপন জান বাঁচা’ অবস্থায়। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে নিরাপদে থাকলেও তার বিশাল কর্মী সমর্থক গোষ্ঠী আছে নানামুখী সংকটে। শুধু তাই নয়, যে নির্বাচন করে তিনি টানা ক্ষমতা ভোগ করেছেন সেই নির্বাচনের খেসারত দিচ্ছে পুলিশ, সরকারি আমলাসহ সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে অনেক ডিসি, এসপি, ওসি বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন। অনেকেই হয়েছেন মামলার আসামি। আবার কেউ গেছেন কারাগারে। আতঙ্কে আছেন বহু সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী। ওদিকে আওয়ামী লীগের এই শোচনীয় পরিস্থিতিতে রাজনীতি থেকে অবসরেও যাচ্ছেন কেউ কেউ। যেমন কারারুদ্ধ সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন-জীবনে আর রাজনীতি করবেন না। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রংপুর এলাকার সাবেক এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান বলেন, স্ত্রীর চিকিসার্থে বেশ কয়েক মাস বিদেশে আছি। রাজনীতির খোঁজখবর তেমন রাখছি না। তবে এইটুকু বুঝি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। একই অবস্থা আওয়ামী লীগের রাজনীতিরও। 


ওদিকে ভারত থেকে শেখ হাসিনা দলের কিছু নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন বলে তথ্য আসছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে আছেন এটা নিশ্চিত। তবে তিনি দলের দায়িত্বে আছেন কিনা নিশ্চিত নয়। কারণ তার ওপর দলের সভাপতি হাসিনা বেজায় চটে আছেন। বলা হচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের কারণেই আওয়ামী লীগের এমন শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগের পতনের পর ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। কিছুদিন আগে এই ধোঁয়াশা কেটেছে। তিনি সীমান্ত হয়ে ভারতে গেছেন- এই তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। আওয়ামী লীগের পতনের পর এ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদেরের কোনো বক্তব্য-বিবৃতি সামনে আসেনি। বিচ্ছিন্নভাবে দলের যে কিছু বিবৃতি নানা মাধ্যমে এসেছে তাও প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমের নামে। দলের প্রচার বা দপ্তর থেকেও কোনো বিবৃতি এখন আর আসে না। 


প্রসঙ্গত, হত্যাসহ ২২৭ মামলার আসামি শেখ হাসিনা। ওদিকে হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। সমপ্রতি প্রত্যর্পণ ইস্যুটি ইউনূস-মোদি বৈঠকে আলোচনায়ও এসেছিল। তবে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বৈঠকটির সমাপ্তি ঘটে। এই অবস্থায় শেখ হাসিনা কী করবেন? নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে ততই তাকে ফিরিয়ে আনার সুর হবে চড়া। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এখনো রাজপথ সরগরম। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলেও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি শেখ হাসিনার একেবারেই প্রতিকূলে। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের মতে, তিনি আসলে কারও কাছে নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন, এমনকি পরিবারের কাছেও না। 

অনুসন্ধান'র অন্যান্য খবর