হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রে সান্ডা। এটাকে নিছক একটি প্রাণী মানতে নারাজ সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তারা ইঙ্গিত করছেন, এই সান্ডার মাধ্যমে হয়তো আড়াল করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো নির্বাচনের জন্য খুব বেশি সংস্কারের প্রয়োজন নাই মনে করেন আবু আলম মো. শহীদ খান। গোলাম মাওলা রনি বলেন, যমুনার ওয়ালের মধ্যে রাজ্যের ধুলাবালি। দুই ইঞ্চি পুরু ময়লা। যিনি নিজের ধুলাবালি পরিষ্কার করতে পারেন না, তিনি কীভাবে চট্টগ্রাম পোর্টকে সিঙ্গাপুর পোর্ট বানাবেন, অসম্ভব। এ ছাড়াও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি’র দ্বন্দ্বকে সুপার পলিটিক্সও হতে পারে বলছেন তিনি।
‘সংস্কার, নির্বাচন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ শীর্ষক এটিএন নিউজের ‘নিউজ আওয়ার এক্সট্রা’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তারা। এসময় আবু আলম মো. শহীদ খান সংস্কারের বিষয়ে বলেন, সংস্কারের ট্রেনটা কোথায় যাচ্ছে, কোন স্টেশনে আছে সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে কিন্তু কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সংস্কার থাকবে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে মাঝখানের সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিল ৩/৪ মাস। এই সরকারের মেয়াদ কতো দিন হবে সেটা নিয়েও এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি নাই। এই সরকারকে একটা ‘ভালো’ নির্বাচন করতে হবে। ডিসেম্বরে নাকি জুনে নির্বাচন সেটাও পরিষ্কার না। ভালো নির্বাচনের জন্য তেমন কোনো সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা সেটাও প্রশ্ন থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, ১/১১ সরকারের সময় যেসব বিধি করা হয়েছে তার কিছু বিধি জনস্বার্থবিরোধী। ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রাপ্তির বিষয়ে যে বিধি আরোপ করা হয়েছে তা স্বার্থবিরোধী। নির্বাচন কমিশনে যেভাবে ক্ষমতায়িত করা আছে সেখানে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই একটা ভালো নির্বাচন করা যায়। এরশাদ সাহেব তার সময়ে বিসিএস এডমিনে অনেক নিয়োগ দিয়েছিলেন। একেক বছরে ১৬৫০ জন করে। সাহাবুদ্দিনের সরকার আসার পর কিন্তু অনেককে সরিয়ে ফেলা হয় নাই। কিছু সচিব, জেলা প্রশাসন, পুলিশে কিছু রদবদল করা হয়েছে। ’৯১ সালে ভালো নির্বাচন হয়েছে। ’৯৬-এ ৩ মাসের মধ্যে একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। ২০০১, ২০০৮ সালে ভালো নির্বাচন হয়েছে। তাহলে এখন দরকার সরকারের সদিচ্ছা ও রদবদল। যারা খুব বেশি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তাদের নিউট্রাল করতে পারেন। যেমন, চাকরিচ্যুতি, ওএসডি করতে পারেন। তারপর এমন লোকদের নিয়োগ করেন যাদের ওপর আপনার ভরসা আছে। এরপর পরিষ্কার নির্দেশনা দিতে হবে। তবে প্রথম লক্ষ্য থাকতে হবে নির্বাচনের টার্গেট। কিন্তু কোনোটাই দেখতে পারছি না।
বর্তমান সময়ের অস্থিরতার বিষয়ে গোলাম মাওলা রনি বলেন, রাস্তায় যারা স্লোগান দিচ্ছেন, আন্দোলন করছেন তাদের অসাধারণ প্রাণশক্তি দেখছি না। কিন্তু আগে যেটা দেখেছি ৩৮/৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছেলেমেয়েরা সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিল। প্রাণশক্তি নিয়ে স্লোগান দিচ্ছে। জলকামান দিয়ে পানি দিচ্ছে- পালায় যাচ্ছে। আবার তারা ফিরে আসছে। এরকম এখন দেখা যাচ্ছে না। এখন এক গ্রুপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছে, তাদের ঠাণ্ডা পানি দেয়া হচ্ছে। আবার মাথার উপর বৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। এরকম কিছু নাটক হচ্ছে। এখন কিন্তু কেউ রাজনীতির কথা ভাবছে না। এখন সংস্কারের কথা চিন্তা করা যাচ্ছে না। এখন মূল স্লোগান হচ্ছে- ‘মুলা না বোতল? বোতল বোতল’, ‘মাহফুজ না সান্ডা? সান্ডা সান্ডা’। এগুলো ট্রেন্ড হয়। অনলাইনের ভোটাররা একপাশে বিএনপি বা এনসিপি’র নেতাকে রাখছে ওপর পাশে রাখছে সান্ডাকে। এখন অনলাইন ভোটাররা সান্ডাকে জয়ী করছে।
সান্ডা দেখলে ঘৃণা ঘৃণা লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক প্রাণী থাকতে সান্ডাকে বের করলো এটা ইনোভেশন। আমরা আইনস্টাইনকে পাইনি। জুলিয়ার্স সিজারের মতো বীরকে পাইনি। কিন্তু আমাদের দেশের এরকম বীরকে আমরা পেয়েছি যারা মুলা-সান্ডাকে আবিষ্কার করেছে। উন্মাদনার মধ্যে কে ড. ইউনূস, কে আসিফ নজরুল, কে তারেক রহমান... এসব ব্যক্তির গুরুত্ব নাই। এখন মুলার গুরুত্ব বেড়ে গেছে। এখন মায়েরা-বোনেরা রাস্তায় নেমে গেছে। নারীর সঙ্গে নারীরা ফাইট করে, পুরুষের সঙ্গে পুরুষ ফাইট করে। এখন নারী নীতি নিয়ে পুরুষ ভার্সেস নারী ফাইট হচ্ছে। অবকুণ্ঠধারী যারা রমণী তাদের স্বামীরা স্ত্রীদের পক্ষে ফাইট করে যাচ্ছে। তাদের বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করা হচ্ছে। যাদের গালাগালি করতেছে তারা বলতেছে- এটা তো ডাল-ভাত। তারা রাগ হয়ে রাস্তায় নেমে নিজেরাই বলছে, আমরা আমাদের অধিকার চাইতে এসেছিলাম, বেশ্যা বলা হচ্ছে। এই কথা শুনে প্রতিপক্ষ পুরুষ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। ইতিহাসে এরকম কখনো দেখি নাই। আমরা একটা বিরাট পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। এই পরিবর্তন ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর হস্তান্তর করা হবে বিদেশিদের কাছে। এটা একটা ন্যাশনাল পোর্ট। এখানে অনেক সিকিউরিটি ম্যাটার থাকে। ধরেন সেনাবাহিনীর অস্ত্র, গোলা-বারুদ পোর্ট দিয়ে আসবে। আবার যত টাকা ছাপানো হয় সিকিউরিটি পেপার আসবে। এখন যারা পরিচালনা করবে তাদের কাছে সার্ভার সিকিউরিটি থাকবে। তাদের হাতে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মোটামুটি ডিটারমাইন্ড। তিনি বলছেন, এই চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হার্ট। এই হার্টে রোগ হয়েছে। আমরা যদি নিজেদের হার্ট পরিষ্কার করা জন্য সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া যেতে পারি, অন্যের কাছে খুলে দিতে পারি- তাহলে পোর্ট কেন পারবো না। অসাধারণ যুক্তি। আমি চিন্তা করি এই মহামানব যদি এই সময়ে বাংলাদেশে না আসতেন এধরনের তথ্য-উপাত্ত না দিতেন- আমাদের যে কী হতো?
এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমাদের দেশের অনেকের অভাব-অভিযোগ আছে। অনেকের চাকরি নাই, খেতে পারছে না। কিন্তু আমাদের মানবিকতাবোধ টনটন করছে। ১২/১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াচ্ছি। এরপরও মিয়ানমারে যে ৮/৯ লাখ রোহিঙ্গা আছে তাদের আমরা খাওয়াবো। যারা রোহিঙ্গাদের পিটাচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষু, আরাকান আর্মি তাদের খাওয়াবো। এই খাওয়ানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য থেকে একটা মানবিক করিডোর আমরা দিচ্ছি। একদিকে অভাব...ব্যবসায়ীরা বলছে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান নেই, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে মানবতা একেবারে উতরে পড়ছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো কেপিআই জোন আছে। এরমধ্যে বঙ্গভবন, গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন রয়েছে। এসব জায়গায় সরকারের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত না থাকলে কেউ অনুষ্ঠান করতে পারে না। এই যে নারীবাদী সংগঠন অনুষ্ঠান করেছেন, ধরে নেয়া হয় সরকারের একটা গ্রিন সিগন্যাল আছে; না হলে তারা করতে পারতেন না। সেখানে দেখলাম সবারই অদ্ভুত পোশাক। সেখানে একে অপরের মাথা আঁচড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এটা বাংলাদেশে এক নবউদয়। যখন বৃষ্টি হয় তখন রংধনুর অনেক রং। আমাদের সমাজে নানা ধরনের রংধনুর উদয় হয়েছে।
সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান চট্টগ্রাম পোর্টের বিষয়ে বলেন, আশপাশের দেশগুলোতে তাকাই- ভারতের ১২টা গভীর সমুদ্র বন্দর রয়েছে। আমাদের একটা। পাকিস্তানেরও একটা। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সবগুলোই সরকার চালায়। এই যে পোর্টের বিষয়ে অনেক অভিযোগ। সরকারের বিষয়েও তো অনেক অভিযোগ। মাথাব্যথা হলে প্রথমে প্যারাসিটামল খাবেন। এরপর ইনজেকশনও নিতে হতে পারে। কিন্তু মাথা তো কেটে ফেলে দিতে পারেন না আপনি। পোর্টের যে রাজনৈতিক সমস্যা, ট্রেড ইউনিয়নের সমস্যা, লুটপাটের সমস্যা, অনেক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেন। তার বদলে একমাত্র বন্দরটাকে বিদেশিদের তত্ত্বাবধায়নে দিয়ে দেবো... এটা তো মেজর সিদ্ধান্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের মধ্যে এটা ছিল কোনোদিন তো শুনি নাই। ড. ইউনূস সাহেব চট্টগ্রাম গেলেন তারপর এই কথা শুনলাম, তার আগে তো শুনি নাই। অনেক কথাতো তাদের ভেতরে থাকতে পারে। যেমন, মানবিক করিডোরের কথা আমরা হঠাৎ করে শুনলাম। চট্টগ্রাম পোর্ট, মানবিক করিডোর এসবের বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে। এসব কারণেই ঢাকায় সান্ডা, বোতল, মুলা। ৩-৪ দিন ঢাকায় এসব হলো। জগন্নাথ আন্দোলন করলো। এরপর মেনে নেয়া হলো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যেমন ওদের ৭০ শতাংশ আবাসিক ভাতা দিতে হবে। জগন্নাথ তো আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয় নাই। ৭০ শতাংশ আবাসিক ভাতা দিলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেন। সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই তো তাহলে আবাসিক ভাতা দিতে হবে। আন্দোলনের বিষয়ে তো আলোচনা করতে হবে। যার কারণে নাগরিকদের অনেকেই মনে করছেন এটা ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা, অন্যকিছুর জন্য। রাজনীতিবিদরা ভাবছেন এসবের মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়টা ডিলে করা হচ্ছে কিনা।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, গত ২০১৪ থেকে রাজনৈতিক কালচার হয়েছে যে, জনগণ ভোট দেবেন বা আমাকে জনগণকে রাজি খুশি করিয়ে সংসদে যেতে হবে এই বিষয়টি নষ্ট হয়ে গেছে। একারণে টকশো, সভা-সেমিনারে গণতন্ত্রের কথা বলতে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নির্বাচনী এলাকায় যেয়ে বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এখন যেভাবে চলছে তাতে মনে হচ্ছে আগের চাইতে এখন পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। যার কারণে ঢাকায় বসে যারা রাজনীতি করছেন তাদের সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ের লোকের দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, এখন সংস্কার একটি ব্যাড ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে গেছে। সংস্কারের কথা বললে মানুষ ভীষণ বিরক্ত হয়। চেয়ারের একটা গুরুত্ব আছে। এই জিনিসগুলো আরও ভালো হয় যদি ভালো কাজ বা চিন্তা করেন তার উপর ঐশ্বরিক ভাব চলে আসে। এই সময়ে যারা উপদেষ্টা আছেন, কারও চেয়ারের মধ্যে এই ভাবটা আছে কিনা? আমি দেখছি সবার মুখ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ক বলতে গেলে খ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোতে তারা যা বলছে, যা চিন্তা করছে এবং যা ঘটছে তার সমন্বয় হচ্ছে না। তারা এখন যে জায়গায় আছে আমি ২০০৯ সালে তার থেকে ভালো জায়গায় থেকে এসেছি। আমি সংসদ সদস্য হয়ে ৫ বছর কাটিয়ে এসেছি। কিন্তু এনাদের মধ্যে কোনো ছন্দ নাই। বর্তমানে ঢাকা শহরের সব থেকে অবহেলিত ভবন যমুনা। সামনে পুলিশের কাঁটাতারের বেড়া। বন্দুক নিয়ে পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছে। কেউ নাক খোঁচাচ্ছে, কেউ কান খোঁচাচ্ছে। ওয়ালের মধ্যে রাজ্যের ধুলাবালি। ওয়ালে দুই ইঞ্চি পুরু ময়লা। যিনি নিজের ধুলাবালি পরিষ্কার করতে পারেন না, তিনি কীভাবে চট্টগ্রাম পোর্টকে সিঙ্গাপুর পোর্ট বানাবেন, অসম্ভব। চ্যারিটি বিগ্যান্স ফরম হোম। এখানে যা কিছু হচ্ছে এতে ভালো কিছু আশা করা মানে চারদিকে প্রলয়ের মধ্যে ভালো কিছু আশা করা। এখানে যা কিছু হচ্ছে এটাকে অন্য কিছু নাম দিতে পারেন কিন্তু বর্তমানে রাজনীতি বলে কিছু নাই।
বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিড়ালের মুখ থেকে বাঘের মুখে পড়েছি... এই বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন- কেন বলেছেন। তবে, যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছিল, সেখানে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। ’৭১-এও কিন্তু এই স্বপ্নই ছিল। কেউ কারও মুখে ফেলে দেয় নাই। নির্বাচন ছাড়া সরকার ছিল নানা কারণে সেই সরকারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের লক্ষ্য, স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে গেছে। ১৪৪ ধারা থাকার পরও যমুনার সামনে ট্রাক দিয়ে মঞ্চ সাজিয়ে তিনদিন ধরে প্রোগ্রাম করলো। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা আসলো তাদের গরম পানি, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিপেটা করা হলো। এক সপ্তাহের মধ্যেই পুলিশের দুই ধরনের আচরণ। সংস্কারের কথা বলছেন, ঘরের আশপাশ থেকে শুরু করেন। এখানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। এখানে এনসিপি, জামায়াত অন্য যে কেউ হোক যেতে পারবে না। সবার জন্য একই আইন হতে হবে। যার কারণে জনগণ একটা অবিশ্বাসের মধ্যে আছে। পুলিশও কিছু বুঝতেছে না। পুলিশকে বললাম এখানে ১৪৪ ধারা আছে কিন্তু তুমি এদের কিছু বলবা না। আবার স্লোগান দেয়া হলো- গোলাম আযমের বাংলাদেশ, নিজামির বাংলাদেশ, জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় যা হলো তা তো আমরা দেখেছি। এরপর যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আসলো তখন বলা হলো এদেরকে সরিয়ে দাও। পুলিশের মোর্যাল এমনিতেই দুুর্বল।
এনসিপি’র সঙ্গে জামায়াতের দ্বন্দ্ব সামনে আসলো। এটা কেন হলো? উত্তরে গোলাম মাওলা রনি বলেন, এটা একটা সুপার পলিটিক্স হতে পারে। জামায়াতের সঙ্গে ভারতের, র’-এর একটা সম্পর্ক আছে। এটা জামায়াতের ঘনিষ্ঠজনরা বলার চেষ্টা করেন। আবার কানাঘুষা আছে জামায়াতের বি টিম এনসিপি, আবার এনসিপি’র বি টিম জামায়াত। মাহফুজ, সারজিস তারা সবাই জামায়াতের রিক্রুট। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ চলে গেছে। তারা বিএনপিকে মাইনাস করতে চাচ্ছে। তারা বিএনপিকে বিরোধী দল হিসেবে চাচ্ছে। তারা ক্ষমতায় আসবে বিএনপি সেকেন্ড পজিশনে থাকবে। যার কারণে তারা চাচ্ছে টোটাল এটেনশনটা তাদের দিকে হোক। এজন্য একে অপরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। মাস মিডিয়ার একটা বেসিক প্রিন্সিপাল আছে, নেতিবাচক হোক, ইতিবাচক হোক যেকোনো সমালোচনা আপনার পক্ষে যাবে। এটা একটা সাজানো নাটক হতে পারে। একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে। মাহফুজ সাহেব একটা কথা বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, গত কয়েক মাসে যারা আশাহত হয়ে গেছেন, তারা কিন্তু মাহফুজ সাহেবের প্রতি খুশি হয়েছেন। জামায়াতের পেইড কিছু লোক আছে তারাও জামায়াতকে গালি দিচ্ছে। এটাও রাজনীতিতে ইতিবাচক। আগে আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা হতো ১০টি। এখন নিষিদ্ধ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা হচ্ছে ২০টি। কী হবে, কী হতে পারে, এই কেস কেন করা হলো ইত্যাদি কথাবার্তা হচ্ছে। এসব কথাবার্তাগুলোকে ডাইভার্ট করার জন্যই এগুলো নতুন ধরনের পলিসি অব মার্কেটিং।
গ্রন্থনা: পিয়াস সরকার