এক্সেলেন্সি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আপনি কেমন আছেন? আমার জানা মতে, আপনি এখন ফুরফুরে মেজাজে আছেন। কারণ, কয়েকদিন আগে আপনি উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ তিনটি দেশ সফর করে এসেছেন। তিনটি দেশের সরকার এবং জনগণ আপনাকে অত্যন্ত জাঁকজমক ভাবে সংবর্ধনা দিয়েছে। তিনটি দেশের মানুষ আপনাকে আপন করে নিয়েছে। সেই সাথে তিনটি দেশের সঙ্গে আপনি বিরাট অঙ্কের বাণিজ্য করে এসেছেন। কাতারের আমীর আপনাকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ উপঢৌকন দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিরবৈরী সিরিয়ার অভ্যুত্থানের নায়ক আহমেদ আল শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আপনি ক্ষমতায় এসেই অনেক দেশের উপর শুল্কহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্রতম দেশ। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ও তার দোসররা এ দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে বিদেশে। দেশের অনেক শিল্প-কারখানাও বন্ধ। পোশাক খাতের অবস্থাও নাজুক। এই অবস্থায় আমাদের দেশের উপরও আপনি শুল্কহার বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা শুল্কহার কমানোর জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন আপনার বরাবর। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে, আপাতত স্থগিত রয়েছে শুল্কহার। আশাকরি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে শুল্কহার আগের পর্যায়েই রাখার চিন্তা-ভাবনা করবেন। আমাদের দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক ধারা নেই বললেই চলে। স্বৈরাচারী হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের গণতন্ত্র থমকে আছে। দেশে এখন দাবি-দাওয়ার মৌসুম চলছে। ঢাকা শহর এখন দাবির শহরে পরিণত হয়েছে। সড়ক বন্ধ করে অবস্থান অবরোধে সীমাহীন দুর্ভোগ ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। সভা-সমাবেশে বিধি-নিষেধ থাকলেও কেউ তা মানছেন না। দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছেন মানুষ। এই অবস্থায় চাপ পড়ছে অর্থনীতিতে। অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ভারত বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক প্রক্রিয়াজাত, খাদ্যপণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও নাজুক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন আশার আলো শুধু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। আশা করি, আমাদের এ অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের উপর আরোপিত শুল্কহার আগের পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবেন।
মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধ করেছি। দুটি দেশের কর্ণধারদের আলোচনার টেবিলে বসিয়েছি।” এর জন্য আপনি প্রশংসার দাবিদার। ভারত উপমহাদেশের এই দু’টি দেশ যদি পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তো তাহলে দু’টি দেশের লাখ লাখ মানুষ মারা যেত। দু’টি দেশের সহায় সম্পদের ক্ষতি হতো। দেশ দু’টির অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়তো আর এর আঁচ লাগতো প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর। প্রতিবেশী দেশগুলোও এর আঁচ থেকে পরিত্রাণ পেতো না। এই মহাদুর্যোগ থেকে আপনি দেশ দু’টিকে যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করতে পেরেছেন, এ কারণে আপনি প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু একটি বিষয় এখনো স্পষ্ট- দেশ দু’টির মধ্যে এখনো বৈরীভাব রয়ে গেছে। তারা মিডিয়ায় নানা রকম বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন। উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বাইরে দেখা যাচ্ছে শীতল কিন্তু ভেতরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আশা করি প্রেসিডেন্ট, এব্যাপারে আপনি আরও একটু তৎপর হবেন। যাতে ভবিষ্যতে দেশ দু’টি আবার যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে। মি. প্রেসিডেন্ট, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় সামান্যের জন্য যমদূতের হাত থেকে আপনি ফিরে এসেছেন। আততায়ীর গুলি অল্পের জন্য আপনার মাথা বিদীর্ণ করেনি। কানের পাশ দিয়ে গেছে। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আপনি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন। মহান স্রষ্টা আপনাকে মানুষের, দেশের, সর্বোপরি বিশ্বের মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসবেন। তবেই আপনার এই জীবন সার্থক হবে। বলতে দ্বিধা নেই, মহান স্রষ্টা আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট করে সেই সুযোগ অবারিত করে দিয়েছেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় গাজায় ইসরাইলের অমানবিক যুদ্ধের কারণে গাজার নিষ্পাপ মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। এমন দিন নাই মানুষ মারা না যাচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। বিশ্বের মানুষের প্রতিবাদের মুখেও ইসরাইল তার আগ্রাসী ভূমিকা থেকে পিছপা হচ্ছে না। গাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ইসরাইলি বাহিনী গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ করছে। এতে যুদ্ধে আহত মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছে না। অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। এই অমানবিকতার এখনই পরিসমাপ্তি হওয়া দরকার। মি. প্রেসিডেন্ট আপনি পারেন এই বর্বর ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে। আসুন না প্রেসিডেন্ট- এই শীতল লড়াই, সীমান্ত লড়াই, জাতিনিধন লড়াই, আগ্রাসী লড়াই, সুয়েজ খালের লড়াই, অন্য দেশ দখলের লড়াই বন্ধ করে একটি শান্তিময় বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে শামিল হই। যে বিশ্বে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, যুদ্ধ শুধু ধ্বংসই ডেকে আনে। শান্তি বয়ে আনে না। এখনো জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতা বয়ে বেড়াচ্ছে। জাপান নিউক্লিয়ার যুদ্ধকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আসুন না পৃথিবীকে সুন্দর করার জন্য, মানুষের বসবাসের জন্য ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করি আর ইসরাইলকে এই অমানবিক যুদ্ধ থেকে বিরত রাখি। আর সেই সঙ্গে পাকিস্তান আর ভারতকে বলি যুদ্ধ নয় শান্তি! শান্তি!! শান্তি!!!