৫ই আগস্ট অভূতপূর্ব এক পরিবর্তন। কোটা নয় মেধার দাসত্ব থেকে মুক্তির আন্দোলন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। ব্যাপক জনজোয়ার। একের পর এক ব্লকেড। আসে রাষ্ট্র সংস্কারের একদফা। জনরোষে শেখ হাসিনার পলায়ন। প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা। নতুন পরিবর্তনের আশায় দিন গুনতে থাকে মানুষ। ইতিমধ্যে ছয় মাস অতিক্রান্ত। এ সময়কালে রাজনীতি, অর্থনীতির বাইরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ মানুষকে ভাবিয়ে তোলে অনেক বেশি। ৫ই আগস্ট থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি। এই ৬ মাসের মধ্যে দেশ একটি নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রার বদলে মবোক্রেসিতেই যেন বেশি আক্রান্ত। বিশেষত ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যকে ঘিরে সারা দেশে টানা তিনদিন যে ধরনের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সরকার প্রথমদিকে শৈথিল্যের পরিচয় দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। কথা থাকে মবোক্রেসিই যদি সবকিছুর নিয়ন্তা হয় তাহলে সরকার থাকা না থাকার ফারাক কোথায়? শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ভাঙচুর চলছে। প্রধান উপদেষ্টা দেরিতে হলেও উদ্বেগ জানিয়েছেন কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সংঘটিত ঘটনার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে যখন গাজীপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ঘোষণা করে সরকার। এ নিয়েও বিতর্ক চলছে। এ ধরনের পদক্ষেপ কতোটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে তা নিয়ে বিশিষ্টজনরা প্রশ্ন জারি রেখেছেন। বিশেষত বিএনপি’র প্রথম জমানায় ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক জন্ম দিয়েছিল। জনতার চোখ যখন প্রকাশিত হচ্ছে তখন খবর এসেছে সরকার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছেন। নেতৃত্বে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সহ-সভাপতি আছেন সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশন সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কার নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠকে বসবে, ঐকমত্য গঠনে কাজ করবে। বিএনপি’র সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে আশ্বস্ত করেছেন ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন। শান্তিপ্রিয় জনগণেরও আশা একটাই, দেশে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।